রাতে শোয়ার সময়ের গুরুত্বপূর্ণ আমল।
রাতে শোয়ার সময়ের আমল
রাসুলুল্লাহ (সা:) এশার নামাযের পর স্ত্রীদের খোঁজ খবর নিতেন। সকল স্ত্রীগণ একঘরে একত্র হতেন। প্রত্যেকের সঙ্গে কথাবার্তা ও মত বিনিময় শেষে খাবার খেয়ে নিতেন এবং যে ঘরে রুটিন মোতাবেক শোয়ার কথা সে ঘরে গিয়ে শুয়ে যেতেন। অর্থাৎ তিনি দ্রুত শুয়ে পড়তেন। আল্লাহ তায়ালা রাত দিয়েছেন ঘুম ও বিশ্রামের জন্য। ঘুম সুস্থ থাকার প্রধান উপাদান। এশার পরে এক-দেড় ঘন্টার মধ্যে শুয়ে গিয়ে সোবহে সাদিকের সময় যারা নিয়মিত উঠবে তাদের রোগ বালাই খুবই কম হবে। তবে এজন্য দিনের বেলায়ও নিয়ম মেনে চলতে হবে। নিয়মিতও পরিমিত খাবার খেতে হবে। সুস্থ থাকা আল্লাহ তায়ালার সবচেয়ে বড় নেয়ামত। অসুস্থ ব্যক্তি নিজের জন্য, পরিবার ও সমাজের জন্য বড় বোঝা। সুস্থ না থাকলে ইবাদত বন্দেগীও হয় না। এটা শুধু ধর্মীয় বানী নয় মানুষ মাত্র সকলেই এটা স্বীকার করেন। সেজন্যই নবিজীর জীবনটা খুবই বিজ্ঞান সম্মত। আমরা তাই আগে আগে শুয়ে যাব এবং ভোর রাতে উঠার অভ্যাস করব।
শোয়ার সময় ডান কাতে শুতে হবে এবং এই দোয়া পড়তে হবে “আল্লাহুম্মা বিসমিকা আমুতু ওয়া আহ্ইয়া। এরপর সূরা ফাতিহা তিনবার, সূরা নাস, সূরা ফালাক, সূরা কাফিরুন একবার ও সূরা ইখলাস তিনবার পড়বেন ও শরীরে ফুক দিবেন। এরপর সূরা তাকাসুর ১ বার পড়বেন। রাসুল (সা:) সাহাবীদের বললেন তোমরা শোয়ার সময় এক হাজার আয়াত তিলাওয়াত করে শুবে। সাহাবায়ে কিরাম শুনে অবাক হয়ে গেলেন। তখন রাসুল (সা:) বললেন তোমরা সূরা তাকাসুর ১ বার পড়লে ১ হাজার আয়াতের সমান হয়ে যাবে। এরপর ১ বার আয়াতুল কুরসি, ১ বার সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত ও সূরা মূলক ১ বার এবং একশত বার আসতাগফিরুল্লাহ ও একশত বার দরুদ শরীফ একশত বার সুবহানাল্লাহ, একশত বার আলহামদুলিল্লাহ্, একশত বার আল্লাহু আকবার ও একশত বার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ পূর্ণ করে মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ্ নিয়মিত পড়বেন। এভাবে পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে গেলে সারারাত্রি জিকিরের মধ্যে থাকার সওয়াব লিখা হবে। জানমাল নিরাপদ থাকবে। শয়তানের ক্ষতি থেকে রক্ষা হবে। রাতে যদি জাগ্রত হন তখন, সুবাহনাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহু আকবর পড়ে বলবেন আল্লাহুম্মাগফিরলি।
এছাড়া দৈনন্দিন জীবনে সকল কাজ শুরুর সময় দোয়া ও কাজ শেষে যেসব দোয়া ওলীআল্লাহগন পড়তেন সেগুলী লিখে নিয়ে পড়ার চেষ্টা করবেন।
রাসুল (সা:) একদিন সকাল বেলায় তার সম্মুখে উপস্থিত সাহাবীগণকে জিজ্ঞাসা করলেন। আজ তোমাদের মধ্যে কে কে রোযা রেখেছ, সকলেই চুপ রইলেন, কিন্তু আবু বকর (রা:) হাত উঠিয়ে বললেন আমি রোযা রেখেছি। এরপর তিনি জিজ্ঞাসা করলেন আজ এখানে আসার পূর্বে গরীব-মিসকীনকে কে খাবার দিয়ে এসেছ, সকলেই চুপ থাকলেও আবু বকর (রা:) বললেন আমি। এরপর নবিজী জিজ্ঞাসা করলেন আজ কে কে রোগী দেখে এসেছো? আবু বকর (রা:) একাই হাত উঠালেন, এরপর জিজ্ঞাসা করলেন কে কে জানাজায় অংশগ্রহণ করেছ? আবু বকর (রা:) একাই হাত উঠালেন। তখন রাসুল (সা:) বললেন জান্নাতী মানুষ দেখতে চাইলে আবু বকরকে দেখে নাও (মুসলীম)। আমরা দৈনন্দিন জীবনে এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ আমলগুলো ছাড়বনা ইনশাল্লাহ।
রাসুল (সা:) আরও বলেন, “তোমরা বেশী বেশী সালাম চালু কর। অর্থাৎ যাকে চিন বা চিননা সবাইকে সালাম দাও। আর গরীব অসহায়দের খাবার দাও, আর আত্মীয়তার সম্পর্ক অটুট রাখ এবং মানুষ যখন ঘুমায় তখন নীরব রজনীতে উঠে নামায (তাহাজ্জুদ-নফল) আদায় কর। আর এ আমলগুলোর বদৌলতে শান্তিপূর্ণভাবে জান্নাতে প্রবেশ কর। রাসুল (সা:) বলেছেন, তোমরা রাস্তায় বসলে বা রাস্তায় চলার সময় রাস্তার হক আদায় কর। সাহাবায় কিরাম জিজ্ঞাসা করলেন রাস্তার হক কি ইয়া রাসুলাল্লাহ (সা:)। তিনি বললেন, “রাস্তার হক হল, মানুষকে সালাম দেয়া, মানুষের চলাচলের জন্য জায়গা করে দেয়া, রাস্তায় আবর্জনা না ফেলা, মানুষের কষ্ট দূর করা। ভাল কাজের আদেশ ও মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করা।
আমরা ইবাদত করব কিন্তু তা করতে হবে তাকওয়ার সাথে। আল্লাহ তায়ালাকে শুধু খুশি করার নিয়তে। রাসুল (সা:) এর দু’চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ত নীরবে নামাযে তিলাওয়াতের সময় ও কোরআন তিলাওয়াত করার সময়, মানুষের দু:খ দেখে বা শুনে। কিন্তু তার কান্নার আওয়াজ ছিলনা। আমরাও আল্লাহর ভয়ে কান্না করব বা কান্নার চেষ্টা করব। কিন্তু আওয়াজ করে নয়। রাসুল (সা:) এর চার কন্যা ও দুই পুত্রের ইন্তেকাল হয়েছে। তিনি শোকে মুহ্যমান হয়েছেন কিন্তু আওয়াজ করে কাঁদেননি, নানাভঙ্গিতে তিনি শোক প্রকাশ করেননি। আমরা বিপদে ধৈর্য্য ধারন করব এতে আল্লাহ তায়ালার সাহায্য ও শক্তি আসবে।
কোন মন্তব্য নেই