হালাল-হারাম ও হকুক জানা।

হালাল-হারাম ও হকুক জানা


হালাল রুজি না হলে কোন ইবাদত কুবল হবে না। অর্থাৎ আমরা একদিকে যেমন জেনে বুঝে ইবাদত করব তেমনি সবকিছু পবিত্র ও হালাল না হলে ইবাদত কবুল হবে না।


এজন্য বারে বারে নামাযের সাথে যাকাত আদায়ের কথা বলা হয়েছে । একই সঙ্গে নামাযের সাথে রোজা বা হজ্জের কথা বলা হয়নি। কোরআনের বহু আয়াতে “নামায কয়েম কর ও যাকাত আদায় কর”। কিন্তু নামায কায়েম কর ও রোজা পালন বা রোজা রাখ কিংবা নামায কায়েম কর ও হজ্জ কর এভাবে একটি স্থানে ও বলা হয়নি। রোজা ও হজ্জের কথা পৃথক পৃথক আয়াতে বা হাদীসে বলা হয়েছে। নামাযের সঙ্গে যাকাত এ দুটি ভিন্ন ধরনের হলেও বারে বারে এক সঙ্গে কেন বলা হল ? নামায শারিরীক ইবাদত, তার সঙ্গে আর একটি শারিরীক ইবাদত রোজার কথা না বলে যাকাত আর্থিক ইবাদতকে নামাযের সঙ্গে একসাথে বলার উদ্দেশ্যটা কি ? উদ্দেশ্য হচ্ছে নামায পড়তে আসার আগে যার সম্পদ নিসাব পরিমান সে যেন হিসেব করে যাকাতটা দিয়ে আসে। যাকাত আদায় করলে সম্পদটা হালাল হয়ে যাবে। আর ঐ হালাল সম্পদের দ্বারা যে শরীর গঠিত হবে সে শরীরের দ্বারা নামায পড়লে বা রোজা রাখলে তা আল্লাহ্ গ্রহন করবেন। হালাল ও পবিত্র ছাড়া আল্লাহর নিকট কিছুই গ্রহন যোগ্য নয়। এজন্যই বলা হয় নামাযে কাপড় পাক, শরীর পাক ও জায়গা পাক হতে হবে। সে সাথে নিজের সম্পদ এবং রোজগার ও হালাল হতে হবে। বোখারী শরীফের হাদীস, আল্লাহর রাসুল (সাঃ) বলেন, বান্দাহ্ বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সমস্যায় পড়ে আল্লাহর নিকট অনেক আবেদন-নিবেদন করে। অনেক করজোড়ে অনেক কিছু চায়, কিন্তু তার সম্পদ ও শরীর পবিত্র ও হালাল না হওয়ার কারণে তার দোয়া কবুল হয়না। কিন্তু সে সেটা অনুধাবন করতে পারেনা।


আমাদের আর একটি দায়িত্ব হল হকুক সম্পর্কে জানা। হকুক হকের বহু বচন। অর্থাৎ আমার উপর আল্লাহর কি হক ও বান্দার কি হক তা জানা ফরজ। আল্লাহর হক ইমান আনা, তার সাথে কাউকে শরীক না করা, কবীরা গুনাহ থেকে বিরত থাকা, নামায, যাকাত, রোজা ও হজ¦ ঠিকমত পালন বা আদায় করা। আল্লাহর হকের জন্য আল্লাহর নিকট দায়ী থাকতে হবে। আল্লাহর হকের ক্ষেত্রে মার্জনা বা ক্ষমার জন্য তওবার বিকল্প কিছু নেই। তওবার মূল কথা হল কবীরা গুনাহ আর করবোনা এ বলে আল্লাহর সঙ্গে ওয়াদা করে ফিরে আসা এবং যে গুনাহ হয়ে গিয়েছে তার জন্য ক্ষমা চাওয়া।


আর বান্দার হকের জন্য বান্দার নিকট দায়ী থাকতে হবে। আল্লাহ তায়ালা এজন্য কোন দায়িত্ব নিবেননা। তবে আদালতে আখেরাতে আল্লাহর হক বা বান্দার হকের বিচার ও আল্লাহই করবেন। বান্দার হকের মাফ বা ক্ষমা বান্দা থেকেই নিতে হবে। বান্দার হক সর্বদা পারস্পরিক হয়। যেমন স্বামীর উপর স্ত্রীর হক, স্ত্রীর উপর স্বামীর হক। পিতা-মাতা ও সন্তান আবার সন্তান ও পিতা-মাতার হক। নিকটাত্নীদের ও  দুরাত্নীয়দের হক। কেনা-বেচা, লেন-দেন, চুক্তি, ওয়াদা বা অঙ্গিকার রক্ষা ইত্যাদির হক আদায়। এধরণের পারস্পরিক স্বার্থ রক্ষার অধিকার গুলো বান্দার হক। এসব হকের হকদার যারা তাদের থেকে দুনিয়াতেই মাফ নিতে বা পরিশোধ করে মিটমাট করে নিতে হবে। মৃত্যুর পর  আর সম্ভব হবেনা।


হকদাররা আল্লাহর নিকট বিচার প্রার্থী হয়ে গেলে নিজের নেক আমলগুলো পাওনাদাররা সব নিয়ে যাবে। তারপরও যদি দাবীদারদের দাবী শেষ না হয় তাহলে দাবীদারদের পাপ বা গুনাহ্গুলো তার ঘাড়ে তুলে দেওয়া হবে। রাসুল (সাঃ) এর একটি বিখ্যাত হাদীস, একদিন তিনি সাহাবীগনকে জিজ্ঞাসা করলেন তোমরা কি বলতে পার সবচেয়ে গরীব ও সর্বহারা ব্যাক্তি কে? সাহাবীগন বললেন, আমরাতো জানি যার কোন সহায় সম্পদ নেই, সেই গরীব বা অসহায় লোক। রাসুল (সঃ) বললেন, না আমি তোমাদের দুনিয়ার গরীব লোকের কথা জিজ্ঞাসা করিনি বরং পরকালে সব চেয়ে নিঃস্বব্যক্তির কথা। তখন তাঁরা বললেন আল্লাহ ও তাঁর রাসুল ভালো জানেন। রাসুল (সাঃ) বললেন তোমরা জেনে রেখো বিচার দিবসে এমন অনেক ব্যক্তিকে ডাকা হবে তার অনেক নেক আমল থাকবে এবং এর বিনিময়ে সে জান্নাতী হওয়ার উপযোগীও হবে কিন্তু তার জিম্মায় বান্দার হক থাকায় তারা আল্লাহ্ তায়ালার নিকট দাবী তুলবে ইনসাফের। আল্লাহ তায়ালা ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করবেন এবং যার যতটুকু পাওনা সে অনুপাতে ঐ ব্যক্তির অনেক আমল পাওনাদারদের দিয়ে দিবেন। এভাবে সকলের পাওনা মিটাতে গিয়ে এক পর্যায়ে তার আর কোন নেক আমল থাকবেনা। কিন্তু পাওনাদার এখনও বাকী আছে। তখন তাদের গুনাহগুলো ঐ ব্যাক্তির জিম্মায় দিয়ে দেওয়া হবে। তার অর্থ হাশরের ময়দানে যার সব ছিল কিন্তু সব হারিয়ে সে একেবারেই নিঃস্ব অসহায় ব্যাক্তি হিসেবে পরিগনিত হবে। সেজন্যই আমাদের জানা জরুরী যে আমার উপর কার কার কি কি হক ও অধিকার রয়েছে তাদের হক আদায় করে দেওয়া। যদি পাওনা হক আদায় করা পুরোপুরি সম্ভব না হয় তা দুনিয়াতেই শেষ করা এবং মিট মাট করে নেয়া।


কোন মন্তব্য নেই

sebastian-julian থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.