দৈনন্দিন নেক আমলের ক্ষেত্রে নামায।
দৈনন্দিন নেক আমলের ক্ষেত্রে নামায
ধীরস্থিরভাবে নামাজ আদায় করা, মনে রাখতে হবে নামায ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নত ও নফল এ চার রকমের নামায রয়েছে। নফল নামায ঐচ্ছিক হলেও নফল শুরু করা মাত্রই সেটা আদায় করা আবশ্যকীয় হয়ে যায়। আর কোন নামাযই তাড়াহুড়ো করে আদায় করলে সেটা আর নামায থাকেনা। অধিকাংশ মুসল্লি কওমাতে অর্থাৎ ‘ছামিয়াল্লাহু লেমানহামিদাহ’ বলে সোজা হওয়ার আগেই সিজদায় চলে যায়। অথচ সোজা হয়ে কিছু সময় (কয়েক সেকেন্ড) দাঁড়াতে হবে এবং সোজা অবস্থায় রাব্বানা লাকাল হামদ্ বলে এর পর সিজদায় যেতে হবে। আবার যখন প্রথম সিজদা থেকে উঠবে তখন সোজা হয়ে না বসে অর্ধেক পরিমান উঠে পুুনরায় দ্বিতীয় সিজদায় চলে গেলে ওয়াজিব তরক হয়ে যায়। রুকু থেকে সোজা হয়ে কিছুক্ষণ না দাঁড়ালে এবং প্রথম সিজদা থেকে উঠে কিছুক্ষণ আরামে না বসলে এ দু অবস্থায় ওয়াজিব তরক হওয়ার কারনে নামায হয়না- এ বিষয়টি হয়তো অনেক মুসল্লি জানেনা। এই যে রুকু থেকে সোজা হয়ে দাঁড়ানো এবং প্রথম সিজদা থেকে আরামে কিছুক্ষণ বসা অবস্থায় যে সুন্দর ও ফযিলতের তছবীহ্ আছে তাও আমাদের জানা উচিত আমরা দোয়া-মোনাজাতের আলোচনায় সেগুলো উল্লেখ করব।
অযু ও নামাযের মধ্যে প্রায় ১০ হাজার মাসয়ালা রয়েছে। নামাযী ব্যক্তিকে ফরয ওয়াজিব ও সুন্নাতে মুয়াক্কাদার মাসয়ালাগুলো অন্তত জানা জরুরী। কারণ আগে ইলেমকে আল্লাহ্ ফরজ করেছেন অর্থাৎ জানাকে। না জানলে তো মানা যাবে না বরং ভুল হয়ে যাবে। আমরা ফরয, ওয়াজিব, সুন্নাত ও মুস্তাহাবের পার্থক্য জানিনা না জানার কারণে ঐচ্ছিক কাজটাকে বাধ্যতামূলক কাজ মনে করি। আর বাধ্যতামূলক কাজটিকে ঐচ্ছিক মনে করি।
তিন শ্রেণির সালাত আদায়কারী সালাত আদায় করা সত্তে¡ও জাহান্নামে যাবে। তারা হলো : ১. যারা অলসতা করে সঠিক সময়ে সালাত আদায় করে না, তাদের সালাত কবুল হয় না। তাদের জন্য পরকালে শাস্তি রয়েছে। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, “অতঃপর দুর্ভোগ ওই সব মুসল্লির জন্য, যারা তাদের সালাত সম্পর্কে উদাসীন।” (সূরা মাউন : ৪-৫)।
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসিরবিদরা লিখেছেন, এরা হলো সে সব লোক, ‘যারা সালাত থেকে উদাসীন ও খেল-তামাশায় ব্যস্ত।’ উদাসীন লোকদের মধ্যে একদল এমন আছে, যারা রুকু-সিজদা, ওঠাবসা যথাযথভাবে করে না। কেরাত, দোয়া ও তাসবিহ যথাযথভাবে পাঠ করে না। কোন কিছুর অর্থ বোঝেনা বা বুঝার চেষ্টাও করে না। আজান শোনার পরও যারা অলসতাবশে নামাজে যেতে অনীহা প্রকাশ করে এবং সালাতে দাঁড়িয়ে অমনোযোগী থাকে।
২. যারা দায়সারাভাবে সালাত পড়ে এবং সালাতের বিধি-বিধানগুলো যথাযথভাবে পালন করে না। আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, ‘রাসুল (সঃ) একদিন মসজিদে প্রবেশ করেন তখন এক ব্যাক্তি মসজিদে প্রবেশ করে সালাত আদায় শেষে রাসুলুল্লাহ্ (সঃ) কে সালাম দিল। তিনি সালামের জবাব দিয়ে বললেন, তুমি যাও, ফের সালাত আদায় করো। কেননা তুমি সালাত আদায় করোনি। এভাবে লোকটি তিনবার সালাত আদায় করল। রাসুল (সঃ) তাকে তিনবারই ফিরিয়ে দিলেন। তখন লোকটি বলল, হে আল্লাহর রাসুল! যিনি আপনাকে সত্য সহকারে প্রেরণ করেছেন, তাঁর কছম করে বলছি, এর চেয়ে সুন্দরভাবে আমি নামাজ আদায় করতে জানি না। অতএব আমাকে সালাত শিখিয়ে দিন।
অতঃপর রাসুল (সঃ) বললেন, ‘যখন তুমি সালাতে দাঁড়াবে তখন তাকবির দেবে। তারপর কোরআন থেকে যা পাঠ করা তোমার কাছে সহজ মনে হয়, তা পাঠ করবে। তারপর ধীরস্থিরভাবে রুকু করবে। অতঃপর সোজা হয়ে দাঁড়াবে। তারপর ধীরস্থিরভাবে সিজদা করবে। অতঃপর মাথা উঠিয়ে সোজা হয়ে বসবে। আর প্রত্যেক সালাত এভাবে আদায় করবে।’ (বোখারি-৭৫৭)।
অন্য হাদিসে রাসুল (সঃ) এরশাদ করেছেন, ‘মানুষের মধ্যে সর্বাপেক্ষা বড় চোর ওই ব্যক্তি যে তার সালাত চুরি করে। সাহাবিগন জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! সে কীভাবে সালাত চুরি করে? তিনি বললেন, সে সালাতে রুকু ও সিজদা পূর্ণ করে না।’ (মুনাদে আহামাদ-২২৬৯৫)।
রাসুলুল্লাহ্ (সঃ) এর ভাষায় বড় চোর হচ্ছে যারা সালাতের মধ্যে চুরি করে। পার্থিব জীবনে মানুষ মানুষের ধন-সম্পদ, টাকা-পয়সা চুরি করে, এটাকে সামান্য চুরি বলা যেতে পারে। কিন্তু যে ব্যাক্তি নিজের মহামূল্যবান সম্পদ, জান্নাতে যাওয়ার পুঁজি, শ্রেষ্ঠতম ইবাদত চুরি করে সে-ই প্রকৃতপক্ষে বড় চোর।
৩. যারা লোক দেখানো সালাত আদায় করে মহান আল্লাহ বলেন, ‘যারা লোক দেখানোর জন্য তা করে।’ (সূরা মাউন : ৬)। মোনাফিকরা মানুষকে দেখানোর জন্য সালাত পড়ে। যেমন মহান আল্লাহ অন্য আয়াতে বলেছেন, ‘নিশ্চয় মোনাফেকরা আল্লাহকে ধোঁকা দেয়, আর তিনিও তাদের ধোঁকায় ফেলেন। যখন ওরা সালাতে দাঁড়ায়, তখন অলসভাবে দাঁড়ায় লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে। আর তারা আল্লাহকে অল্পই স্মরণ করে।’ (সূরা নিসা : ১৪২)।
মহান আল্লাহ লোক দেখানো ইবাদতকারীকে তার আমলসহ প্রত্যাখ্যান করেন। হাদিসে কুদ্সিতে এসেছে, মহান আল্লাহ বলেন, ‘ আমি অংশীবাদিতা (শিরক) থেকে সব অংশীদারের তুলনায় বেশি মুখাপেক্ষীহীন। যে ব্যাক্তি কোন আমল করে এবং তাতে অন্যকে আমার সঙ্গে শরিক করে, আমি তাকে ও তার আমলকে বর্জন করি।’ (মুসলিম-২৯৫৮)। মহান আল্লাহ আমাদের যথাযথভাবে সালাত আদায় করার তৌফিক দান করুন।
কোন মন্তব্য নেই